তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘তথ্যের স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং যেসব অধিকারের প্রতি জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার অন্যতম ভিত্তি’’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মানবাধিকারের সব আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সংরক্ষিত, যাকে একটি আইনগত অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে আইনের মাধ্যমে মানুষের এ অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR), 1966 এর অনুচ্ছেদ ১৯(২) অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারই হলো তথ্য অধিকার।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রণীত একটি আইন। এই আইনটি তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকলেই সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি বা বিদেশী অর্থে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে তথ্য জানার অধিকার লাভ করে।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, এই আইনের মাধ্যমে জনগণ সরকারের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারবে, যার মাধ্যমে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এছাড়া তথ্য অধিকার আইন নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যও সাধন করে-
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর অধীনে "কর্তৃপক্ষ" বলতে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থাসমূহকেও বোঝানো হয়েছে, যাদের কাছ থেকে নাগরিকরা তথ্য জানার অধিকার রাখে।
এ আইনের এর ধারা ২-এর (ঘ) উপধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বলতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে:
ক) সংবিধান দ্বারা সৃষ্ট কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কার্যালয়;
খ) কোনো আইন দ্বারা সৃষ্ট কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কার্যালয়;
গ) সরকারি অর্থায়নে গঠিত বা পরিচালিত কোনো বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
ঘ) কোনো বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যা সরকারি বিধি, প্রজ্ঞাপন বা সরকারি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অনুদান বা সুবিধা গ্রহণ করে;
ঙ) কোনো বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান করে এবং যা সরকার কর্তৃক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়েছে;
চ) সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দিষ্টকৃত অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠা
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ১০ অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি কোনো কর্তৃপক্ষের প্রতিটি তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জনগণ তথ্য চেয়ে লিখিতভাবে অনুরোধ করতে পারবে ।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ধরনের তথ্য জানতে চাওয়া যাবে না:
তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৮(১) আবেদনকারীকে একটি লিখিত আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদন করতে হবে সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে। আবেদনে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে:
পূরণকৃত আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদনকারী সরাসরি জমা দিতে পারেন অথবা রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাতে পারেন।
তথ্য অধিকার আইনের ধারা(৯) অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনকারীর আবেদন পাওয়ার অনধিক ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য। যদি তথ্য প্রদানে তিনি ব্যর্থ হন বা অপারগতা জানান, তবে তার কারণ উল্লেখ করে আবেদনকারীকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা যদি অন্য কোন ইউনিটি বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যোগাড় করতে হয় তাহলে এই সময়সীমা অতিরিক্ত ১০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
যদি আবেদনকারী অনুরোধকৃত তথ্য না পান, অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান, অথবা তার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে যে কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল সেই ইউনিটের ঠিক ওপরের কার্যালয়ে নিযুক্ত আপিল কর্মকর্তার কাছে আপিল করতে পারবেন।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী, আপিল করার নিয়মাবলী নিম্নরূপ:
যদি আপিলের রায়েও আবেদনকারী সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তিনি তথ্য কমিশনে দ্বিতীয় আপিল করতে পারেন।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ২৫ অনুযায়ী, আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সিদ্ধান্ত পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে দ্বিতীয় আপিল করতে পারবেন। যদি আপিল কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না দেন, তবে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে আপিল করা যাবে।
তথ্য কমিশন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত করে তাদের সিদ্ধান্ত প্রদান করবে। তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে বাধ্য।